সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ জেনে নিন

সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে আপনি জানতে ও ভ্রমণ করতে আগ্রহী হন, তাহলে আজকের আর্টিক্যালটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও সাজেক ভ্যালি যাওয়ার সময় যেসব চোখে পড়বে এ সম্পর্কে আমি আপনাকে বিস্তারিত সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।
সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ
সেই সাথে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে বিভিন্ন ধরেনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই আর্টিক্যালে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নেই বিস্তারিত তথ্যগুলো সম্পর্কে ।

ভূমিকা

আমাদের সকলেরই ভ্রমণের কথা ভাবলে যেসব স্থানের কথা মাথায় আসে সেগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালী অন্যতম এবং জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান।সাজেক ভ্যালির চারপাশে মেঘের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে প্রকৃতি তার নিজের মতো করে। এর আঁকাবাকা পথ আপনাকে রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে বিমোহিত করবে প্রতিটি মুহূর্তে।

সাজেক ভ্যালি রূপকথার গল্পের মতোই যেন একটি রোমাঞ্চে ঘেরা স্বর্গের মতো নয়নাভিরাম। এর রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও এর প্রাকৃতিক বৈচিত্রের মাঝে নিজেকে নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলবেন। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোহে আপনি বিমোহিত হয়ে যাবেন।
সাজেক ভ্যালীর রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র দেখলে মনে হয় যেন প্রকৃতি তার নিজের যত রূপ রয়েছে তার সবগুলোই ঢেলে দিয়েছে সাজেক ভ্যালীতে। সেই সাথে প্রকৃতি সব সময় সাজেক ভ্যালীকে নিজের হাতে আঁকড়ে ধরে থাকে।

সাজেক ভ্যালির পাহাড়ের চূড়া থেকে চারপাশে দেখলে মনে হয় যেন দুধের মতো সাদা মেঘ সাজেক ভ্যালির চার পাশে ঢেকে রেখেছে। এই মন মুগ্ধময় দৃশ্য দেখতে ও উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে হবে।

শুধু মাত্র সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের মাধ্যমেই এর রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র আপনি উপভোগ করতে পারবেন। সুতরাং আপনি যদি একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে পারেন। তাহলে চলু জেনে নিই সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো।

সাজেক ভ্যালি কোথায় অবস্থিত

সাজেক ভ্যালি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নীলা ভূমি। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি মূলত রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন। এর আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল।
সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণে যাতয়াত সুবিধার জন্য খাগড়াছড়ি সদর দিয়ে সাজেকে যাওয়া আসা করে। কেননা খাগড়াছড়ি সদর থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭০ কি.মি.।

সাজেক ভ্যালিতে প্রবেশের পূর্বেই দেখা মিলবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুইপাড়া । মূলত রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাড়া এটি পাড়া মিলেই আমাদের রূপকথার গল্পের মতো অপরূপ সৌন্দর্যের নীলা ভূমি সাজেক ভ্যালির অবস্থান।

সাজেক ভ্যালির পূর্ব দিকে ভারতের মিজোরাম সিমান্ত অবস্থিত। পশ্চিমে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘানালা উপজেলা। উত্তর দিকে ত্রিপুরা রাজ্য অবস্থিত এবং দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলার লংগাড়ু উপজেলা। সাজেক ভ্যালি থেকে ভারতের মিজোরাম সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি।
সাজেক ভ্যালি বর্তমানে বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সাজেক উপত্যকাটি পাহাড়, সবুজ গাছ পালায় ভরপুর গহিণ অরণ্য মাঝে অবস্থিত। এখানে পাহাড় আর মেঘের মিলন মেলাই আপনি গা ভাষাতে পারেন। তাহলে সাজেক ভ্যালি কোথায় অবস্থিত বুঝতেই পারছেন।

সাজেক ভ্যালি পাহাড়ের উচ্চতা কত

সাজেক ভ্যালির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আপনাকে পাহড়ী রাস্তার অসংখ্য আঁকাবাকা পথ পাড়ি দিয়ে আসতে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায়। তবেই এর আসল রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র উপভোগ করতে পারবেন।

সুতরাং আপনি যদি একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ নীলা ভূমি সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণ করতে পারেন। তাহলে জেনে গেলেন সাজেক ভ্যালি পাহাড়ের উচ্চতা কত ?

সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ

সাজেক ভ্যালির মূল আকর্ষণ হল এর অরণ্যে ঘেরা পাহাড় এবং সেই পাহাড় ও অরণ্যকে ঘিরে রেখেছে সাদা মেঘের চাদর এবং পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট ছোট অসংখ্য নদী। নদী গুলোত মধ্যে অন্যতম হল কাচালং নদী ও মাচালং নদী। যা আপনাকে প্রতিটি মুহূর্তে রোমাঞ্চকর অনুভুতি দিবে। সেই সাথে আপনাকে করবে মন মুগ্ধময়।


কথায় আছে প্রকৃতির সন্নিকটে আসলে সকল দুঃখ, কষ্ট, ক্লান্তি, অবসাদ সব দূর হয়ে যায়। সুতরাং আপনি যদি বিষণ্ণতায় ভূগে থাকেন তাহলে ভ্রমণের মাধ্যমে আপনার সকল প্রকার বিষণ্ণতা দূর করতে পারবেন সহজেই।
এছাড়াও সাজেক ভ্যালির অদূরেই আপনি দেখতে পারবেন অসংখ্য সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান গুলোর প্রকৃতিক সৌন্দর্য। যা আপনাকে প্রতিটি মুহূর্তে করবে বিমোহিত। তাহলে চলুন সাজেক ভ্যালির কাছে আরও দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে জেনে নিই বিস্তারিত তথ্য-

কমলক ঝর্ণার: কমলক ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার মতো পথ আপনাকে পাড়ি দিতে হবে। সাজেক ভ্যালির পাহাড় ও মেঘের মিলন মেলা সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি কমলাক ঝর্ণার সৌন্দর্য আপনাকে আরো রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিবে। সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোর একটি

কংলক পাড়া: সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া আপনি চাইলে ভ্রমণ করতে পারেন। এটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। সেই সাথে এটি সাজেকের সর্বচ্চ উচ্চতম স্থান। এখানে লুসাই সম্প্রাদয়ের পাড়া। 

কংলক পাড়া থেকে আপনি ভারতের লুসাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এই পাহাড় থেকেই আমাদের কর্ণফুলি নদীর উৎপত্তি হয়েছে। অনেক সময় নিরাপত্তা জনিত কারণে সাজেক বিজিপি ক্যাম্প থেকে এই স্থানে অনুমতি দেওয়া হইনা। সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোর একটি

দীঘানাল বনবিহার: সাজেক ভ্যালির অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পরে, ফিরার পথে দীঘানাল বনভিহার উপভোগ করতে পারেন। এর প্রাকৃতিক রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে।

দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রীজ: সাজেক ভ্যালীর সৌন্দর্য উপভোগের পর ফেরার পথে আপনি চাইলে দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রীজের অপরূপ সোন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সুতরাং আপনি যদি সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করেন তাহলে অবশ্যই দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রীজ ভ্রমণ করতে পারেন।

সুতরাং আপনি যদি একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করা উচিৎ। এগুলোই সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।

সাজেক ভ্যালি যাওয়ার সময় যেসব চোখে পড়বে

পাহাড়ের রাণী এবং রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয় সাজেক উপত্যকাকে। সাজেক ভ্যালি পাহাড় ও গহিন অরণ্যে ঘিরা। এর চারপাশে মেঘের চাদরে ঢাকা। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য হাজারো মানুষ আঁকাবাকা পাহাড়ী দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসে।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ি সদর থেকে যেকোনো বাহনের মাধ্যমে যখন পথ অতিক্রম করবেন, ঠিক তখনই আপনার চারপাশের পাহাড়ে ঘেরা আঁকাবাকা পথের অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। 

প্রকৃতির হাতে গড়া এ পথ পাড়ি দেওয়া সময় দশম বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প আপনার চোখে পড়বে এবং সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার জন্য এই সেনাবাহিনি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে। তারপর আবারও পাহাড়ী আঁকাবাকা পথ পাড়ি দিয়ে উপরে দিকে বা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এসময় আপনি লক্ষ্য করবেন টাইগার টিলা সেনাবাহিনী ক্যাম্প ও মাচালং বাজার।

এছাড়াও পথের পাশে পাহাড়ী ঘন জঙ্গল ও বিভিন্ন ছোট ছোট পাড়া ও বাজার চোখে পড়বে। সাজেক ভ্যালির পথের অপরূপ সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তাহলে বুঝহতেই পারছেন সাজেক ভ্যালি যাওয়ার সময় যেসব স্থান আমাদের চোখে পড়বে ।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের প্রয়োজনীয় টিপস

  • সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বেই আপনাকে অবশ্যই হোটেল বুক করতে হবে।
  • আপনি যদি নির্জনতা প্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে ছুটির দিন গুলোতে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো।
  • সাজেক ভ্যালি পাহাড় উপরে অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানে কোনো বিদ্যৎ এর ব্যবস্থা নেই। এই জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সাথে রাখতে হবে। যেমন- পাওয়ার ব্যাংক, ঔষধ ইত্যাদি।
  • সাথে হালকা কিছু খাবার নিয়ে নিতে পারেন।
  • অবশ্যই পরিমাণ মতো পানি নিয়ে যাবেন কেননা এখানে পানির সংকট রয়েছে।
  • সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার পথ গুলো খাড়া ও আঁকা বাকা ও ঝুকিপূর্ণ, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
  • সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য সেনাবাহির কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি পত্র নিতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখীন হতে পারেন। এগুলোই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের প্রয়োজনীয় টিপস।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ

  • সাজেক ভ্যালি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রথমেই আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে খাগড়াছড়ি সদরে আসতে হবে।
  • কেননা এখান থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি।
  • খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যাওয়ার জন্য অসংখ্য জীপ গাড়ি বা চাঁদের গাড়ি। সিএনজি পেয়ে যাবেন। তবে সাজেকের পথ খাড়া উঁচু হওয়ার জন্য সিএনজি না যাওয়ায় ভালো। সুতরাং আপনি যদি ছোট গ্রুপে ভ্রমণ করতে চান তাহলে অন্য কোনো ভ্রমণকারীদের গ্রুপের সাথে যোগ দিতে পারেন।
  • এখানে যাওয়া আসা সহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।
  • আর সিএনজি তে ভ্রমণ করলে ৪-৫ হাজার টকার মতো খরচ হতে পারে। তবে পাহাড়ী আঁকাবাঁকা ও খাড়া উঁচু পথে সিএনজি ভ্রমণ না করায় শ্রেয়। এগুলোই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে ইতি মধ্যে সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত ভাবে জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করা উচিৎ বলে মনে করি।

আজকের এই আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করেবেন। সেই সাথে নিত্যনতুন সকল বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url