সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে আগ্রহী হন, তাহলে আজকের আর্টিক্যালটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও আদার রসের উপকারিতা সম্পর্কে আমি আপনাকে বিস্তারিত সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতাসেই সাথে আদার সকল বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত ভাবে বিভিন্ন ধরেনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই আর্টিক্যালে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নেই বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

আদাকে বলা হই সব রোগের দাদা। আদাতে প্রচুর পরিমান অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে। যার ফলে শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। রান্নার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এছাড়াও আদা প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। অতি প্রাচীনকাল থেকেই এটি ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আমরা তো প্রায় সময়ে চাইয়ের সাথে আদা খেয়ে থাকি, কিন্তু আদা পানির উপকারিতা এর চেয়েও বেশি পরিমাণ। সুতরাং বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে, নিয়মিত সকালে খালি পেটে আপনি যদি আদা পানি খেতে পারেন বা পান করতে পারেন।
তাহলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকবেন, সেই সাথে সহজেই বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। তাহলে চলুন জেনে নিই সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে সকল বিস্তারিত তথ্য।

আদার পুষ্টিগুণ

  • পটাশিয়াম
  • আয়রণ
  • ম্যাগনেশিয়াম
  • ক্যালশিয়াম
  • ফসফরাস
  • সোডিয়াম
  • জিংক
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি৬
  • ভিটামিন ই
  • ভিটামিন সি
  • অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল
  • অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি
  • এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা

জ্বর, সর্দি ও কাশি দূর করে: আদা ঠান্ডা জনিত সকল রোগ দ্রুত সারাতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনি যদি ঠান্ডা জনিত কোনো সমস্যায় ভুগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আদা খেতে পারেন অথবা আদার রস পান করতে পারেন।

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আদাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভুরপুর। এছাড়াও বিশেষ করে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে। যা আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

সুতরাং আপনি যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আদা খেতে পারেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আদা আমাদের বদ হজম দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। কেননা প্রতিদিন এক চমচ পরিমাণ আদার রস পান করলে বদ হজম দূর হয়ে হজম শক্তিবৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পেট ফাপাসহ বিভিন্ন ধরণের পেটের সমস্যা খব সহজেই দূর হয়ে যায়।
সুতরাং আপনি যদি গ্যাস্ট্রিক বা বদ হজমের সমস্যা দ্রুত দূর করতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আদার রস সেবন করুন। সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

ডায়াবেটিক নিয়িন্ত্রণ করে: আদা ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখে। কেননা আদা রক্তের শর্করা ও সুগার বা চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । এছাড়াও আদা আমাদের দেহে ইন্সুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

সুতরাং আপনি যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকে ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আদার রস সেবন করতে পারেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: আদা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কেননা আদাতে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। যেমন- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার এবং লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

সুতরাং ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে আপনি চাইলে নিয়মিত আদার রস পান করতে পারেন।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: আদা কোলেস্টেরল এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কেননা আদাতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি।

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: আদা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর জন্য নিয়মিত প্রতিদিন সকাল বিকাল এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হবে ।

ডায়েবেটিস রোগীদের মধু বাদ দিয়ে খেতে হবে। সুতরাং আপনি চাইলে উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আদার রস সেবন করতে পারেন।

বমি বমি ভাব দূর করে: যারা প্রতিনিয়ত বমি বমি ভাবে ভোগেন , তারা একটুকরো আদা মুখে দিয়ে চিবোতে পারেন। এতে করে বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
 
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: যাদের মুখে দুর্গন্ধর সমস্যায় ভুগেন তারা নিয়মিত একটু করে আদা চিবাবেন, এতে করে মুখের ব্যাক্টেরিয়া দূর হয়ে যাবে।সেই সাথে মুখের দুর্গন্ধ ও দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও মুখের ইনফেকশন থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে।

আর্থ্রাইটিসের ব্যাথা দূর করে: আদা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আদাতে আন্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে আদা সেবন শরীরে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা যেমন- হাঁটুতে ব্যথা,কুনুই এ ব্যথা, কোমরে ব্যথাসহ বিভিন্ন রকম ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

মাইগ্রেন বা মাথা ব্যাথা দূর করে: আপনি যদি মাইগ্রেনের বা মাথা ব্যাথা সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এর জন্য অবশ্যই আপনাকে প্রথমে সামান্য লবণ দিয়ে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে হবে। তাহলে মাইগ্রেন বা মাথা ব্যাথা দূরহয়ে যাবে।

কিন্তু আপনি যদি একেবারে এ রোগ সারাতে চান তাহলে প্রতিদিন দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু গরম এক কাপ পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।

লিভার ভালো রাখে: আদার রস লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। লিভার ভালো রাখার জন্য আপনাকে নিয়মিত প্রতিদিন দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে পান করতে হবে। তাহলে লিভারের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এতে করে লিভার ভালো ও সতেজ থাকবে। সুতরাং আপনি আপনার লভার ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত আদার রস সেবন করতে পারেন।

পাকস্থলী ভালো রাখে: আদা আমাদের পাকস্থলী ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে নিয়মিত প্রতিদিন দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে পাকস্থলী শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এতে করে পাকস্থলী ভালো থাকবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: আদা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কেননা এতে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপদান সহজেই আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে দ্রুত সাহায্য করে থাকে। সুতরাং ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত আদার রস পান করতে পারেন।সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি।

বিঃ দ্রঃ অতিরিক্ত বেশি আদা কখনই খাওয়া উচিত নয়। এবং গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

আদার রসের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আপনি যেহেতু আমাদের এই আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে এই পর্যন্ত চলে এসেছেন, সেহেতু আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন আদার রসের সকল উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
সুতরাং আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান অথবা রোগকে দূরে রাখতে চান। তাহলে আপনি নিয়মিত আদার রস পান করতে পারেন। তবে আদা উপরের বর্ণিত বিষয় গুলো ছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অতএব আদার গুণাগুণ কখনো বলে শেষ করা সম্ভব নয়। আর এই জন্যই আদাকে মূলত সব রোগের দাদা বলা হয়ে থাকে।

চুলে আদার উপকারিতা

আদা চুলের জন্য খুবই উপকারি। কেননা আপনার যদি অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়া শুরু হয় তাহলে অবশ্যই এটি একটি ক্ষতিকর দিক। সুতরাং আপনি যদি চুল ঝরে পড়া রোধ করতে চান এবং নতুন চুল গজাতে চান তাহলে এর জন্য আপনি আদার রস ব্যবহার করতে পারেন।
আদার রস ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনাকে আদা ভালো করে বেটে সেখান থেকে রস বের করে নিতে হবে। তারপর আদার রস মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে, তবে একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটি হল ভুলেও যেন আদার রস চুলে না লাগে।

আর আদার রস মাথার ত্বকে ব্যবহার করে ৩০ মিনিটের মতো রেখে দিন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে নিন। এতে করে আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং সেই সাথে নতুন চুল গজাবে। আর এটিই চুলে আদার উপকারিতা।

আদার ক্ষতিকর দিক

প্রতিটি জিনিসের ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। ঠিক তেমন আদারও বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যদি আপনি অতিরিক্ত আদা খান তাহলে অবশ্যই ক্ষতি হবে। যেমন- ত্বকের সমস্যা, ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে ।

সুতরাং পরিমানের বেশি আদা খাবেন না। প্রতিদিন ১.৫ মিলিগ্রাম আদা খেতে পারেন। এর বেশি খাওইয়া উচিৎ নয়। তবে গর্ভ অবস্থায় আদা না খাওয়ায় ভালো। এগুলোই আদার ক্ষতিকর দিক।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক আপনি ইতিমধ্যে সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে সকল তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আদা বা আদার রস সেবন করতে পারেন। এতে করে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

এই আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের নিকট অনুগ্রহ করে শেয়ার করে দিবেন। তাহলে তারাও আপনার মতো উপকৃত হতে পারবে। এতো কষ্ট ,ধৈর্য ও আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণভাবে পড়ার জন্য এবং শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আর আপনি যদি সকল বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url