দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনি জানতে আগ্রহী তাহলে আজকের আর্টিক্যালটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যায় এ সম্পর্কে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব।
কিন্তু দাদ সংক্রামণ দূর করার সকল টিপস সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে দাদ সংক্রামণ কেন হয় সে বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য আমাদের জানা জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নিই আজকের আর্টক্যালের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ভূমিকা
যেকোনো ধরণের চুলকানি রোগ খুবই বিরক্তিকর সেই সাথে খুবই যন্ত্রণা দায়ক। দাদ রোগও এক ধরনের চুলকানী জাতীয় রোগ। দাদ রোগ হল একপ্রকার ছত্রাক সংক্রামণ জাতীয় চুলকানী রোগ। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জাইগার ত্বকে হতে পারে।
এছাড়াও মাথায় ত্বকেও হতে পারে। এমনকি নকেও হতে পারে। এই দাদ বা দাউদ একধরনের চর্ম রোগ। যা দেখতে অনেকটা বৃত্তিকার লাল রঙের হয়ে থাকে। সেই সাথে চুলকানি ফুসকুড়ির মতো দেখতে হয়। এ রোগ খুবই বিরক্তকর, অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণা দায়ক।
এই দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় আছে বেশ কিছু। আপনি চাইলে প্রথমিক অবস্থায় এসব টোটকা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি দাদ রোগ খুবই গুরুত্বর হয় বা অনেক দিনের পুরাতন হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
কেননা এই দাদ রোগ একটি ভয়ঙ্কর চুলকানি রোগ। সংক্রামণ স্থানে চুলকাতে চুলকাতে অনেকের চামড়া ছিড়ে রক্ত বেরিয়ে যায়।তাহলে চলুন আজকের আর্টিক্যালের মাধ্যমে দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
দাদ রোগের লক্ষণ
- এটি দেখতে বৃত্তাকার লালচে হয়।
- আক্রান্ত স্থানটি ফুলে থাকে।
- প্রচন্ড অসস্তিকর চুলকানি হয়
- দাদ রোগে আক্রান্ত স্থানে চুল বা লোম থাকলে সেগুলো ঝরে পড়ে।
- ভঙ্গুর নক। এগুলোই মূলত দাদ রোগের লক্ষণ।
দাদ হওয়ার কারণ
ছত্রাকের কারণ: দাদ সাধারনত ছত্রাকের কারনে হয়ে থাকে। সাধারণত ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জাইগায় এই ছত্রাকের সৃষ্ট হয়ে থাকে। সুতরাং ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে স্থান থেকে সৃষ্টি ছত্রাকের কারনে মূলত দাদ বা দাউদ রোগ হয়ে থাকে।
সংক্রামিত ব্যক্তির বস্ত্র: যদি কোনো ব্যক্তির দাদ হয়ে থাকে তাহলে আপনি যদি তার ব্যবহৃত বস্ত্র বা গামছা ব্যবহার থেকে সর্তক থাকবেন। কেননা এর মাধ্যমেও দাদ রোগের সংক্রামন ছড়িয়ে পড়ে।
পোষা প্রাণী: অনেক সময় আমাদের প্রিয় পোষা প্রাণী থেকে এই রোগের সংক্রামণ ছড়ানোর মধ্যমে দাদ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি সেই প্রাণী দাদ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে।
অপরিচ্ছন্নতার জন্য: অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকার জন্যেও অনেক সময় এই দাদ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে: দাদ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও অনেক সময় দাদ রোগের সংক্রামণে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়াও অনেক কারনে দাদ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এগুলোই মূলত দাদ হওয়ার কারণ।
দাদ প্রতিরোধে করণীয়
- সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
- দাদ সংক্রামিত কোনো ব্যক্তির বস্ত্র বা পোশাক, তোয়ালে বা গামছা, চিরনি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- দাদ সংক্রামিত স্থানে তেল বা সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- দাদ সংক্রামিত স্থানটি যতদূর সম্ভব খোলা রাখতে হবে।
- সংক্রামণ স্থানটি শুকনো রাখতে হবে।
- প্রতিদিনের ব্যবহৃত পোশাক প্রতিদিন পরিষ্কার করবেন। বিশেষ করে গেঞ্জি, আন্ডারওয়্যার ও মোজা প্রতিদিন পরিষ্কার করুন।
- দাদ আক্রান্ত স্থানটি ভালোমানে অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে প্রতিদিন ভালোভাবে ধূয়ে সংক্রামিত স্থানটি শুকিয়ে নিন, তারপরে প্রয়োজনীয় ঔষধ বা মলম বা জেল বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
- পরিবারবের কেউ দাদ রোগে আক্রান্ত হলে তার পোশাক আলাদা করে ফেলুন।
- পরিবারের সকল সদেস্যের তোয়ালে বা গামছা ও চুরুনি আলাদা করে ফেলুন।
- অন্যের ব্যবহৃত পোশাক বা বস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- দাদ রোগে আক্রান্ত শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই শিশুর সঠিক যত্ন নিন এবং সেই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে চলা ফেরা ত্যাগ করুন। এসব নিয়ম মেনে চললে এই অসস্থিকর দাদ রোগ থেকে সহজেই মুক্তি মেলে। আর এগুলোই দাদ প্রতিরোধে করণীয় ।
দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাদ রোগ হলে অবশ্যই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় বেশ কিছু উপায় আছে এ রোগ দূর করার। তাহলে চলুন আজকের আর্টিক্যালের দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
নিমপাতার ব্যবহার: নিমপাতায় জীবানু ধ্বংসকারী গুণাগুণ রয়েছে। সুতরাং আপনি গোসলের সময় পানির মধ্যে নিমপাতা দিয়ে গোসল করতে পারেন অথবা সংক্রামিত স্থানে কসুম গরম পানির মধ্যে নিমপাতা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে ধূয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও আপনি চাইলে নিম পাতা বেটে দাদ সংক্রামিত স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে দ্রুত দাদ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার: আমরা অনেকেই রূপচর্চার জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার করে থাকি। কেননা এই অ্যালোভেরা নানা গুণে ভরপুর সেই সাথে জীবানু ধ্বংসকারী। তাই দাদ রোগ দূর করতে অ্যালোভেরা জেলে ভূমিকা অপরিসীম।
সুতরাং আপনি চাইলে দাদ রোগ ভালো করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য দাদ আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। এতে করে দ্রুত দাদ সংক্রামন থেকে মুক্তি পাবেন।
রসুনের ব্যবহার: রসুন যেকোনো ফাঙ্গাস বা জীবান ধ্বংস করতে পারে। তাই রসুন ব্যবহারের মধ্যমে দাদ রোগ দূর হয়। এর জন্য প্রথমে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন ভালো মতো থেতলে বা বেটে নিন এর পরে দাদ আক্রান্ত স্থানের উপরের নিয়মিত ব্যবহার করুন। এতে করে দ্রুতই দাদ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি।
কাঁচা হলুদের ব্যবহার: হলুদে অ্যান্টিসেপটিক রয়েছে সেই সাথে এটি অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাগুণে ভরপুর। তাই হলুদ ব্যবহারের মধ্যমে দ্রুত এই দাদ দূর করা সম্ভব। এর জন্য আপনাকে প্রথমে কাঁচা হলুদ বেটে নিতে হবে তারপরে দাদ আক্রান্ত স্থানের উপরে ব্যবহার করুন এবং সেই সাথে ১০-১৫ মিনিট পরে ভালো মত কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এতে করে আপনি দ্রুত দাদ সংক্রান থেকে মুক্তি পাবেন,সুতরাং আপনি যদি দ্রত দাদ রোগ ভালো করতে চান বা দূর করতে চান তাহলে কাচা হ্লুদ বেটে ব্যবহার করতে পারেন।
দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ
দাদ সংক্রামনে আক্রান্ত হলে বেশ কিছু খাবার থেকে বিরত থাকা উচিৎ। তাহলে দ্রুত দাদ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বা দাদ সংক্রামন দূর করা যায়। তাহলে চলুন দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
- দাদ রোগের সংক্রামণ দূর করতে হলে দুদ্ধজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা দুদ্ধজাত খাবার দাদ সংক্রামণ বৃদ্ধি করে থাকে। সুতরাং দাদ সংক্রামনে আক্রান্ত হলে দুদ্ধজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।অ্যালকোহল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তাই দা রোগে আক্রান্ত হলে অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।
- দাদ সংক্রামনে আক্রান্ত হলে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খবার থেকে বিরত থাকুন এতে করে দাদ সংক্রামণ সারাতে সাহায্য করবে।
- এচাড়াও সেবব খাবার খেলে চুলকায় বা এর্লাজি হয় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পুরাতন দাদ এর চিকিৎসা
প্রিয় পাঠক, আর্টিক্যালের উপরের অংশ পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেনে গেছন দাদ রোগ দূর করার ঘোরয়া উপায় ও প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সুতরাং আপনি চাইলে আমাদের এসব টিপস অনুসণের মাধ্যমে দাদ সংক্রামণ দূর করতে পারেন।
তবে আপনার দাদ সংক্রামন যদি অনেক পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে বসে না থেকে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এতে করে আপনার পুরাতন দাদ এর চিকিৎসা ও সমাধান দ্রুত পেয়ে যাবেন। সেই দাদ সংক্রামণ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যায়
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি দাদ সংক্রামণে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের আর্টিক্যালে বর্ণিত টিপস গুল অনুসরন করতে পারেন। তবে আপনি যদি দাদ রোগে বা সংক্রামনে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকিবেন।
কেননা দাদ সংক্রামনে সাবান ব্যবহার করলে সংক্রামণটি ছড়িয়ে পড়ে। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন দাদ হলে সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরিত থাকতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমাদের আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে জেনে গেছেন যে, দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল ধরনের তথ্য। সুতরাং আপনি যদি দাদ সংক্রামনে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই উপরে বর্ণিত টিপিস গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
আজকের এই আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করেবেন। সেই সাথে নিত্যনতুন সকল বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url