ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি ও ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি এ সম্পর্কে যদি আপনি জানতে আগ্রহী হন এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে এ সম্পর্কেও বিস্তারিত সকল তথ্য আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি
সেই সাথে ডেঙ্গু সংক্রামণের সকল বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত সকল তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নিই আজকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে এক আতংকের নাম হল ডেঙ্গু। এই রোগের ফলে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যায়। তাই ডেঙ্গুকে সাধারন জ্বর ভেবে উপেক্ষা করা ঠিক নয়। এর জন্য যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এটি আপনার মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়াতে। তাই সময় থাকতে ডেঙ্গুর সঠিক চিকৎসা গ্রহণ করলে এই ডেঙ্গু ভালো হয়ে যায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর সারাবিশ্বের প্রায় ১০ কোটির ও বেশি মানুষ এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকের মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং অনেকে এই রোগে আক্রান্ত মারাও যেয়ে থাকে। এই রোগে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবাই আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
তবে যাদের ডেঙ্গু একবার হয়েছে তাদের যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার ডেঙ্গু হয় তাহলে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছিয়ে যাবে। আজকের আর্টিকেলে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি এবং এই মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করার উপায় সহ ডেঙ্গু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে সময় ক্ষেপন না করে চলুন বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।

ডেঙ্গু রোগের কারণ 

ডেঙ্গু জ্বর সাধারনত মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যার জন্য একে বলা হয় মশাবাহিত সংক্রামণ বা রোগ। ডেঙ্গু সব মশার মাধ্যমে ছড়াই না, কিছু নির্দিষ্ট প্রাজাতির মশা যারা এডিস সংক্রামন বহন করে থাকে শুধু সেই মশাগুলো কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেখান থেকে ডেঙ্গুর সংক্রামণ ছড়িয়ে থাকে।

তবে এই এডিস জীবানু বহন কারি মশা সাধারনত ভোরবেলা এবং মধ্যরাতের পর থেকে কামড়ায়। এমনকি এই এডিস মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৪-৬ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার এই ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যকোনো সাধারন মশা কামড়ালে, সেই মশাও তখন থকে ডেঙ্গুর জীবানুবাহি মশায় পরিণত হয়ে থাকে।
মূলত এই কারনেই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রামণ দ্রুত ছড়িয়ে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে ডেঙ্গু রোগের কারণ গুলো সম্পর্কে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি 

ডেঙ্গু রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যা নিম্নে বর্ণনা করা হল-
  • প্রচণ্ড পরিমান জ্বর।
  • তীব্র মাথা ব্যথা বা যন্ত্রণা।
  • মাথাঘোরা।
  • চোখের পিছনে ব্যথা করা।
  • বমিভাব বা বমি করা।
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া।
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
  • মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা।
  • ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি বের হওয়া।
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া।।
  • ত্বক লালচে বর্ণের হয়ে যাওয়া।
  • ত্বকে বিভিন্ন ধরনের র‍্যাশ বের হওয়া।
  • দাঁতের মাড়িতে রক্তক্ষরণ
  • শরীরের বিভিন্ন গিটে ব্যথা হওয়া।
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
  • পেট ব্যথা হওয়া।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট
  • তাহলে বুঝতেই পারছেন ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে 

ডেঙ্গু জ্বর সাধারন ২-১০ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর শরীরে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর প্রায় সব মৌসুমেই হয়ে থাকে কিন্তু শীতকালে মশার প্রকোপ কম থাকে, যার ফলে শীতকালে ডেঙ্গু কম হয়। কিন্তু বর্ষাকাল এবং অন্যান্য মৌসুমে এই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রামণ বেশি ছড়ায়।
তবে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রামণ স্ত্রী মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে এবং ডেঙ্গু জ্বর হলে স্বাভাবিক জ্বরের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন ডেঙ্গু জ্বর হলে কত দিন এবং ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম খাবার হল প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। কেননা এই জাতীয় খাবার গুলো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আপনি যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই মাছ, মাংস, দুধ ডিম ইত্যাদি প্রটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো বেশি খাবেন।

তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ: আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। কেননা ডেঙ্গু হলে শরীরের পানি কমে যায়। তাই এই সংক্রামণকে দ্রুত কাটিয়ে উঠতে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন- ফলের জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। কেননা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রামণ কাটিয়ে উঠতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। যেমন- কমলা, লেবু প্রভৃতি।

ডালিম: আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ডালিম খাওয়া উচিৎ। কেননা ডালিমে মিনারেলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমান ভিটামিন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যার ফলে ডেঙ্গুর সংক্রামণ সারাতে খুবই সহায়তা করে থাকে।

চিরোতা: আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বর বা সাধারন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকলেও আপনি চাইলে চিরোতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরোতা ভিজানো পানি পান করলে সকল প্রকার জ্বরের প্রকোপ দ্রুতই কমে যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ও ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি এ বিষয় গুলো সম্পর্কে।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার 

  • ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ যেহেতু জ্বর সেহেতু প্যারাসিটামল খেতে পারেন প্রথম ১-২ দিন। এর মধ্যে অবস্থার অবনতি হলে অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এতে করে দ্রুত আপনার ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রামণ দূর করতে পারবেন। 
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা অনুভব হতে পারে কিন্তু সেই জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথার কোনো ঔষধ সেবন করা যাবেনা।
  • আপনি যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। কেননা ডেঙ্গুর সংক্রামণে সংক্রামিত হলে শরীরে পানির ঘটতি পড়ে যায়, ফলে শরীর শুকিয়ে যায়। সুতরাং ডেঙ্গু হলে তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। যেমন-স্যালাইন, ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের জুস প্রভৃতি।
  • ডেঙ্গুর সংক্রামণ এড়ানোর জন্য অবশ্যই বাড়ির চারপাশে সব কিছু প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করতে হবে এবং সেই সাথে বাড়ির উঠানে, ছাদে, ফুলের টবে অথবা অন্য কোথাও যদি পানি জমে থাকে তাহলে অবশ্যই তা ভালো মতো পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে এই এডিস মশার সংক্রামণ কমে আসবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রামণ থেকে বাঁচতে নিজে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি অপরকে সচেতন করতে হবে। সবাই মিলে সচেতন হলেই কেবল এই ডেঙ্গু সংক্রামণ থেকে বাঁচা সম্ভব। এছাড়া দিন দিন এই ডেঙ্গুর সংক্রামণ বৃদ্ধি পাবে। ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার করা জন্য এই বিষয় গুলোকে অনুসরণ করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি সম্পর্ণভাবে পড়ার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন এবং সেই সাথে ডেঙ্গুর সংক্রামণে আক্রান্ত হলে যেসব খেতে হবে এবং এর থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায় সম্পর্কে ইতিমধ্যে সকল তথ্য গুলো জেনেছেন।
সুতরাং আর্টিকেলের উপরের অংশে বর্ণিত ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলোর সাথে আপনার যদি কোনো লক্ষণ মিলে যায় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

এই আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের নিকট অনুগ্রহ করে শেয়ার করে দিবেন। তাহলে তারাও আপনার মতো উপকৃত হতে পারবে। এতো কষ্ট ,ধৈর্য ও আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণভাবে পড়ার জন্য এবং শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আর আপনি যদি সকল বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url