কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
প্রিয় পাঠক, কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দেন কে এ সম্পর্কেও বিস্তারিত সকল তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি এই সমস্ত বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেল শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত সকল তথ্য জেনে নিন।
ভূমিকা
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলামের আরেক নাম দুঃখু মিয়া। তিনি বিদ্রোহী কবি, তিনি সাম্যের কবি, তিনি প্রেমের কবি, তিনি বিরহের কবি, তিনি দ্রোহের কবি, তিনি মানবতার কবি। তবে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসাবে সারা বিশ্ব সমাদৃত।কাজী নজরুল ইসলামকে বিশাল সাগরের মাঝে টোর্নেডোর সাথে তুলনা করা হই।
কেননা তিনি সাহিত্য অঙ্গনে “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর রণ-তূর্য;” নিয়ে আগমন করেছিলেন বাংলা সাহিত্যে। একদিকে যেমন আছে বিদ্রোহী উন্মাদনা তেমনি অন্যদিকে আছে প্রেমের স্নিগ্ধতা। একদিকে তীব্র প্রতিবাদ আর অন্যদিকে মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন আমৃত্যু।
আরও পড়ুন: জেনে নিন চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম।
তিনি একাধারে সাহিত্যিক, কবি, ওপন্যাসিক, সঙ্গীতজ্ঞ, গীতকার, সুরকার, নাট্যকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সম্পাদক, এছাড়াও তিনি সৈনিক হিসেবে অন্যায়, অবিচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদাই ছিলেন স্বচ্চার। এসব বিভিন্ন গুণাবলির জন্য কাজী নজরুল ইসলামকে বলা হয়ে থাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিষ্ময়ের নাম।
আজকের আর্টিকেলের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে সময় ক্ষেপন না করে জেনে নিন কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ
জন্ম: কাজী নজরুল ইসলাম ২৪ মে ১৮৯৯ সালে এবং বাংলার ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে বর্ধমান জেলার চারুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
মৃত্যু: কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে এবং বাংলার ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে তিনি পরালোক গমন করেন। কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী র অংশ বিশেষ। সেই সাথে জেনে গেলেন কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ।
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দেন কে
কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা ২২ অক্টোবর ১৯২২ সালে ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর পরই প্রমথ চৌধুরী কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দিয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী
কাজী নজরুল ইসলাম ২৪ মে ১৮৯৯ সালে রোজ মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার অন্তর্গত চারুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী র অন্যতম অংশ এটি।
কাজী নজরুল ইসলামের পূর্ব পুরুষ মোঘল সম্রাজ্যের বিচারলয়ের কাজী ছিলেন। সেখান থেকেই কাজী পদবী বংশনুক্রমে চলে এসেছে। কিন্তু সেই সাথে তাঁদের সার্বিক অবস্থা ধীরে ধীরে নিম্ন মুখী হয়ে পড়েছিল। কাজী নজরুল ইসলাম পিতামহ বা দাদা এবং তাঁর পিতা তাঁদের বাড়ির কাছে হাজী পাহলোয়ানের মাজার শরীফ দেখাশোনা করতেন এবং সেই সাথে মজসিদের ইমাম ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামের নাম দুখু মিয়া কেন
কাজী নজরুল ইসলামের জন্মের পূর্বে তাঁর আরও বড় তিন ভাই ছিলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, তাঁর বড় তিন ভাই তাঁদের জন্মের কিছু পরই মারা যায়। সন্তান হওয়ার পর – পরই অন্যান্য সন্তানরা মারা যাওয়ায় কারনে কাজী নজরুলের জন্মের পরে তাঁর দাদী তাঁর নাম রেখেছিলেন দুঃখ মিয়া।
কিন্তু এই দুঃখু মিয়াই তাঁর জীবনের চরম মুহূর্তে পার করে হয়ে উঠেছেন মহা প্রতিভাবান কবি। যিনি সারা বিশ্ব বিদ্রোহী কবি হিসেবে বিশ্ব সমাদৃত। এছাড়াও কাজী নজরুল ইসলামকে বলা হয়ে থাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিষ্ময়ের নাম। তাহলে বুঝতেই পারছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাম দুখু মিয়া কেন এই সম্পর্কে।
কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবন
কাজী নজরুল ইসলাম বাল্যকালে তাঁর নিকটস্থ মক্তব থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি বাংলা ও আরবি ভাষার সাথে সাথে ফারসি ভাষায় ও রপ্ত করা শুরু করেন। কিন্তু তাঁর মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে তাঁর বাবা মারা যান। তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পরে তাঁদের পরিবারে অভাব-অনটন ও চরম দুদর্শা নেমে আসে।
এরকম অবস্থায় তাঁর লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। যার ফলে মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকার সন্ধানে কাজে নামতে হয়। সেই সময় তিনি মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পাস করে সেখানেই তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু এরপরে তিনি লেটোর দলে যোগ দেন।
লেটোর দলে বিভিন্ন রকমের পালা গান, জারি গান ও মুর্শেদI গান পরিবেশন করা হতো। সেখান থেকেই নজরুলের অসাধারণ প্রতিভা প্রকাশিত হতে শুরু করে। লেটো দলে নজরুলের অসাধারন প্রতিভার জন্য লেটো দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। সেখানে তিনি কবিতা, গান, ছড়া ও পালা গান রচনা করে অসামন্য প্রতিভার পরিচয় দেন।
এরপর আবারও শিক্ষালাভের জন্য আবারও গ্রামের কয়েজনের সহযোগিতায় ভর্তিহন রাণীগঞ্জ শেয়ারশোল রাজ স্কুলে। কিন্তু নজরুলের স্কুলের এই ধরা বাঁধা নিয়ম পছন্দ হয়না। কেননা তিনি ছিলেন চঞ্চল প্রকৃতির একজন মানুষ। এসব কারনে তিনি হঠাৎ করে একদিন স্কুল থেকে উধাও হয়ে যান।
সেই সাথে তিনি আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করেন এবং আসানসলের একটি রুটির দোকানে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে চাকরি নেন আর এই রুটির দোকেনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি কবিতা, গান, গজল ইত্যাদি রচনা শুরু করেন। কিন্তু নজরুলের এইসব প্রতিভা দেখে এক পুলিশের দারোগা তাঁকে সাথে করে নিয়ে এসে ময়ময়নসিংহ জেলা স্কুলে ভর্তি করে দেন।
কিন্তু তিনি পুনরায় রানীগঞ্জের শেয়ারশোল রাজ স্কুল ভর্তি হন। যখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র তখন ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয় এবং সেই যুদ্ধের কারনের তাঁর আর প্রাষ্ঠানিকভাবে লেখাপোড়া আর হয়ে উঠেনি। আর এখান থেকেই কাজী নজরুল ইসলামের প্রাতিষ্ঠিন শিক্ষা জীবন শেষ। কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবন এগুলোই।
কাজী নজরুল ইসলাম কয়টি বিয়ে করেন
কাজী নজরুল ইসলাম দুইটি বিবাহ করেছিলেন। তিনি প্রথম বিয়ে করেন ১৯২১ সালে কুমিল্লার দৌলতপুরের নার্গিস আনম খানকে কিন্তু বিয়ের পরের দিনই নজরুল তাকে ছেড়ে চলে যান এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ১৯২৪ গিরিবালা সেন গুপ্তের মেয়ে প্রমিলা সেন গুপ্তকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কাজী নজরুল ইসলাম কয়টি বিয়ে করেন।
কাজী নজরুলের সেনাবাহিনীতে যোগ দান
১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবিন শেষ হলে কাজী নজরুলের সেনাবাহিনীতে যোগ দান করেন। এরপরে তিনি ৪৯ নাম্বার বাঙালি পল্টন রেজিমেন্টের হাবিদাল পদে পদন্নতি হয়। সৈনিক জীবনে তাঁকে চলে যেতে হয় পাকিস্থানের করাচিতে।
তিনি করাচিতে চাকুরির পাশাপাশি কবিতা ও সাহিত্যচর্চা চালিয়ে গেছেন সমানতালে এবং সেনানিবাসের একজন হুজুরের সাথে তাঁর পরিচয় হলে তিনি আরও কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গজল, ইসলামিক গান ইত্যাদি সাহিত্য রচনাইয় তিনি মনোনিবেশ করেন।
কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেমে গেলে কাজী নজরুল ইসলাম নিজ মাতৃভূমি চারুলিয়ায় ফিরে এসে একনিষ্ঠভাবে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। এরপরে বিভিন্ন পত্রিকায় যেমন- মুসলিম ভারত, মসিক প্রবাসি, বিজলী, ধুমকেতু প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হতে থাকে। আর এভাবেই কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ।
সেই সাথে ১৯২২ সালে সাপ্তাহিক 'বিজলী' প্রত্রিকায় কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর মাত্র ২২ বছর বয়সে 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রকাশিত হয় এবং এই কারনে তিনি সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে ওমর হয়ে আছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা হল- 'মুক্তি'। এই কবিতাটি ১৯১৯ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই কবিতাটিকে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে ধরা হয়।
এছাড়াও কাজী নজরুল ইসলাম অসংখ্য গান, গজল, কবিতা, সাহিত্য ও উপন্যাস রচনা করেছেন । তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হল-
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ কয়টি
কাজী নজরুল ইসলামের সকল কাব্যগ্রন্থ নিচে বর্ণনা করা হল-
কাজী নজরুলের উপন্যাস কয়টি
কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাসের সংখ্যা হল- ৩ টি। সেগুলো হল-
তাহলে প্রিয় পাঠক, বুঝতেই পারছেন কাজী নজরুলের উপন্যাস কয়টি
কাজী নজরুল ইসলামের নাটক কয়টি
কাজী নজরুল ইসলামের নাটকের নাম নিম্নে বর্ণনা করা হল-
তাহলে প্রিয় পাঠক, বুঝতেই পারছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাটক কয়টি।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ সমূহ
কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ সমূহ হল-
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জেনে গেছেন। সুতরাং আজকের আর্টিকেলের কোনো তথ্য যদি আপনার কাছে ভুল হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, তাহলে তথ্য প্রমাণ সহ সঠিক তথ্য অনুগ্রহ করে জানিয়ে দিবেন কমেন্টবক্সের মাধ্যমে।
আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহাকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের নিকট শেয়ার করবেন এবং সেই সাথে এই রকম বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন সকল বিষয়ে তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url