কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে যদি আপনি জানতে আগ্রহী হন এবং একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
সেই সাথে আরও আলোচনা করা হয়েছে কিডনি ভালো রাখতে যেসব খাবার খাবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নিই আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় গুলো।

ভূমিকা

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতঙ্গ গুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। কিন্তু আমাদের নিত্যদিনের কিছু ভুলের জন্য আমাদের শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। অন্যান্য রোগের মতো কিডনি রোগের লক্ষণ আগে খুব একটা প্রকাশ পয়না। এই জন্য মাঝে মধ্যে টেস্ট করে দেখা উতিৎ।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে আক্রান্ত হয়ে আছে এই কিডনি রোগে।এছাড়াও বাংলাদেশে কিডনি জনিত সমস্যার জন্য প্রায় প্রতি ঘন্টায় পাঁচ জনের মতো মানুষ মারা যায়। 
এই কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যার বৃদ্ধির মূল কারন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল কিডনির প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পূর্বে এর তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয়না।কিডনি রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয় বহুল। সতরাং সবার পক্ষে এই রোগের খরচ যোগানো সম্ভব হয়ে উঠেনা। ফলে অকালেই ঝরে যায় বহু প্রাণ। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে, আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে এই রোগ খুব সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নিই কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য এবং সেই সাথে জেনে নিবো কিডনি সংক্রান্ত সকল তথ্যগুলো।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় 

কিডনি ভালো আছে কিনা সেটি বুঝতে হলে আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে কিছু টেস্ট করার মধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা।

মুত্র পরীক্ষা বা ACR: মুত্র পরীক্ষার মাধ্যমে মুত্রে অ্যালবুমিন বা প্রোটিন আছে কিনা, তা দেখা হয়। আমাদের দেহের জন্য প্রটিন খুবই প্রয়জনীয় একটি উপাদান। তাই আমাদের রক্তে প্রোটিন থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রোটিন যদি মুত্র পরীক্ষা করে পাওয়া যায়, তারমানে কিডনি ঠিক মতো রক্তকে ছাঁকতে পারছেন না।
সুতরাং মুত্র বা ইউরিন টেস্ট করার মাধ্যমে যদি প্রটিন পজেটিভ আসে তাহলে আরও বেশি নিশ্চিত হতে আরও একটি টেস্ট করতে হবে সেটি NFR. যদি তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে ইউরিনে প্রোটিন পজেটিভ হয় তাহলে এটি কিডনির রোগের লক্ষণ। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি।

GFR কাউন্ট করতে রক্তের পরীক্ষা: কিডনি অসুস্থ হলে বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো বের করে দিতে পারেনা। এটি জানার জন্য ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করে দেখতে হবে। এরপরে GFR ও টেস্ট করে দেখতে হবে। এরপর এসব রিপোর্ট একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখালে তিনি বুঝতে পারবেন কিডনি ভালো আছে কিনা ।

কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় 

  • সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা হুট করে প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  • প্রাস্রাবে রক্ত।
  • প্রস্রাবের সময় ব্যাথা হওয়া।
  • চোঁখের নিচে, পায়ের গোড়ালি ও হাতে ফোলা ভাব থাকে।
  • ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হয়, সেই সাথে রঙ পরিবর্তন হয়।
  • ঠিকঠাক ঘুম না হওয়া।
  • মাংস পেশিতে টান লাগা
  • এগুলোই কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা: আপনার কিডনি যদি আপনার শরীরে ঠিকঠাক মতো কাজ না করে তাহলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখায় যায়। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কোনো কারণ ছাড়াই সবসময় একপ্রকার ক্লান্ত অনুভব করা। এড়াছাও দুর্বল অনুভব করার মতো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। 
সুতরাং আপনি এইসব লক্ষণে ভুগে থাকলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রস্রাবের সমস্যা: কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হল প্রস্রাবের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন। যেমন- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া কিংবা হুট করে প্রস্রানের পরিমান কমে যাওয়া ইত্যাদি কিডনি সমস্যার লক্ষণ।

প্রাস্রাবে রক্ত: কিডনি অসুস্থ হয়ে গেলে অনেক সময় প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়ে থাকে। এচাড়াও প্রস্রাবে খুব বেশি ফোম থাকলে বুঝতে হবে যে প্রস্রাবের সাথে প্রোটীন বের হচ্ছে। সুতরাং এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায়।

প্রস্রাবের সময় ব্যাথা হওয়া: প্রস্রাব করার সময় ব্যাথা অনুভব করা কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ। প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালা-পোড়া এগুলো সাধারনত মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ। এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে জ্বর এবং পিঠে ব্যথা হয়। সুতরাং এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

ফোলা ভাব থাকে: কিডনির সমস্যা হলে বিশেষ করে চোখের নিচে, পায়ের গোড়ালি এবং হাত ফুলা ভাবের লক্ষণ প্রাকাশ পায়। এসব ফোলার সমসয়া যদি এক থেকে দুই সপ্তাহ হয় তাহলে এটি কিডনি রোগের কারন। কেননা কিডনি যখন শরীর থেকে পানি বের করতে পারেনা তখন পানি গুলো শরীরের নিচে গিয়ে জমা হয়ে থাকে। যার হলে ফোলা ভাব সৃষ্টি হয়।

ত্বকের সমস্যা: কিডনির প্রাধান কাজ হল আমাদের শরীর থেকে সকল প্রকার ক্ষতিকর রাসায়ানিক পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যেমে বাহিরে বের করে দেওয়া। কিন্তু কিডনি যখন এই কাজ গুল ঠিকঠাক মতো করতে পারেনা তখন এর প্রভাব আমাদের ত্বকে পড়ে থাকে। যার ফলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
যেমন- ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চুলকানি হয়, ফুস্কুড়ি বের হতে পারে, ত্বক খসখসে হয়ে যায় এবং ত্বকের রঙ পরিবর্তন ও হয়ে যায়। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায়। সুতরাং এসব লক্ষণ দেখলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

ঠিকঠাক ঘুম না হওয়া: কিডনি রোগের আরও একটি বড় বহিঃপ্রকাশ হল ঠিক ঠাক মতো ঘুম না হওয়া। কেননা কিডনি যখন শরীর থেকে পানি বের করতে পারেনা তখন পানি সারা শরীরের বিভিন্ন জাইগায় জমা হতে থাকে। সেই সাথে কিছু পানি ফুসফুসেও জমা হয়ে থাকে। যার কারনের ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে।

মাংস পেশিতে টান লাগা: কিডনির সমস্যার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন জাইগার মাংসপেশিতে টান লাগে। সুতরাং আপনার যদি এসব লক্ষণ থেকে থাকে তাহলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কিডনি ভালো রাখার খাদ্য

পানি: কিডনি পরিষ্কার করতে এবং ডিটক্সিফাই করতে বেশি বেশি পানি পান করুন। কেননা পানি কিডনি পরিষ্কার করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও নিয়মিত পরিমান মতো পান পান করলে শরীর থেকে টক্সিন দূর করে দেয়। সুতরাং কিডনি ভালো রাখতে হলে নিয়মিত প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।

শাক-সবজি: কিডনি পরিষ্কার করতে হলে বা ভালো ও সুস্থ্য রাখতে হলে নিয়মিত প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। কেননা শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমান ফাইবাই, ভিটামিন, ফলিক এসিড সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সুতরাং নিয়মিত শাকসবজি খেলে কিডনি সহ শরীর সুস্থ্য থাকে।

হলুদ: হলুদ কিডনি পরিষ্কার করতে যথেষ্ঠ সাহায্য করে থাকে। হলুদে প্রচুর পরিমান কারকুমিনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে। যা কিডনি রোগ ও পাথর জমা হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

ক্যানবেরি জুস: ক্যানবেরি জুস আমাদের কিডনি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে। কেননা ক্যানবেরি রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং নিয়মিত ক্যানবেরির জুস পান করলে আমাদের কিডনি পরিষ্কার হয়।

আদা: আদাকে বলা হয় সব রোগের দাদা কেননা। কেননা আদাতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে যেকোনো ধরনের রোগ আমাদের দেখে সংক্রামিত হতে পারেনা। সেই সাথে নিয়মিত আদা খেলে কিডনি আরও বেশি কার্যকারী হয়ে উঠে।

চর্বি যুক্ত মাছ: চর্বিযুক্ত মাছ খেলে কিডনির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। তাই মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চর্বিযুক্ত মাছ খেতে পারেন। যেমন- স্যামন মাছ ও টুনা মাছ ইত্যাদি।

কিডনি ভালো রাখার ফল 

  • সাইট্রাস জাতীয় ফল
  • লেবু,
  • কমলা
  • মাল্টা
  • জাম্বুরা
  • আঙুর
  • বেদানা
  • বেরি জাতীয় ফল
  • শসা
  • জাম
  • স্ট্রবেরি
  • আপেল
  • আনারস।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে বিস্তাঋত তথ্য জেনেছেন। সেই সাথে কিডনি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জেনেছেন। সুতরাং আপনার মধ্যে উপরে বর্ণিত কোনো একটী লক্ষণ থাকলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ রূপে ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url