জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টকেলে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ এবং সেই সাথে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন এবং জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত বা এ রোগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আরও আলোচনা করা হয়েছে জলাতঙ্ক রোগ কেন হয় এবং কতদিন পরে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয় এসব সহ জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ভূমিকা

জলাতঙ্ক রোগ একধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাসটি মূলত বিভিন্ন পশু বা প্রাণী কমড়ালে এই ভয়াবহ রোগ হয়ে থাকে। এছাড়াও এই ভাইরাস জলাতঙ্কে আক্রান্ত কোনো প্রাণীর লালার মাধ্যমেইও ছড়িয়ে থাকে অথবা আচোড় দিলেও এই ভয়াবহ জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। তবে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
সুতরাং এই ভয়াবহ জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ এই রোগের প্রতিকার বা প্রতিরোধ করার সকল উপায় নিইয়র আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে সকল তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। অতএব জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এতে করে আপনি সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

জলাতঙ্ক রোগ কি

জলাতঙ্ক হল এক ধরনের ভাইরাস। জলাতঙ্কের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল- Rabies. এটি মূলত জুনোয়েটিক রোগ অথবা কোনো প্রাণী থেকে রোগটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। এই ভাইরাসটি লিসা ভাইরাসের অন্তর্গত এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
এই জলতঙ্ক রোগে সর্ব প্রথম পশুরা আক্রন্ত হয়ে থাকে তারপরে এই ভাইরাসে সংক্রামিত কোনো পশু যদি আপনাকে কামড়ায় বা আচোড় দেয় তাহলে এই ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করার মাধ্যমে আপনিও জলতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হবেন। এমনি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কোনো প্রাণীর লালার মাধ্যমেও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

জলাতঙ্ক রোগের কারণ 

মানুষের জলাতঙ্ক রোগের কারণ হল কোনো প্রাণী যদি কোনো মানুষকে কামড়ায় তাহলে মূলত এই জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। এছাড়াও এই রোগ হওয়ার আরও কিছু কারন রয়েছে। সেগুলো হল- কোনো পশু যদি আপনাকে আচোড় দেয় অথবা এই ভাইরাসে সংক্রামিত কোনো পশুর লালার মাধ্যমেও এ রোগ ছড়িয়ে থাকে।

জলাতঙ্ক মূলত গৃহপালিত পশু যেমন- বিড়াল, কুকুর, খরগোস প্রভৃতি বা বন্য প্রাণী যেমন-বেজি,বানোর, শিয়াল, মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গৃহ পালিত প্রাণির মাধ্যমে এই রোগটি আরও বেশি ছড়িয়ে থাকে। কেননা এগুলো প্রায় সময়ই আমাদের আশেপাশেই থাকে।
তাই গৃহপালিত প্রাণী আপনার বাড়িতে থাকলে মাঝে মাঝে পরিক্ষা করাতে পারেন এবং ভাইরাস সংক্রান্ত টিকা দিতেও পারেন। এতে করে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। মূলত এসব কারনেই জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। তবে সচেতন হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

জলাতঙ্ক হলে কত দিনে রোগ প্রকাশিত হয়

জলাতঙ্কে ভাইরাসে আক্রান্ত বা বহনকারী কোনো প্রাণী কামড়ালে, আচোড় দিলে, লালার মাধ্যমে বা যেকোনো ভাবে কোনো ব্যক্তি সংক্রামিত হলে, সেই ব্যক্তির মাঝে কিছু দিনের মধ্যে এই জলাতঙ্কে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে প্রায় ৩০ দিন থেকে ৫০ দিনের মতো সময় লাগে।
অথবা সংক্রামিত স্থান বা যেই স্থানে জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো প্রাণী কামোড় দিয়েছে বা আচোড় দিয়েছে সেই স্থানের উপরে ভিত্তি করে এই সময় ৯০-১২০ দিন পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, জলাতঙ্ক হলে কত দিনে রোগ প্রকাশিত হয়।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ

অন্যান্য রোগ গুলোর মতো জলাতঙ্ক রোগেরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে তবে এই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে বেশ কিছু দিন সময় লাগে যা ইতি মধ্যেই আমরা জেনেছি। তাহলে চলুন এখন জেনে নিই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে-

  • জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হল বমি করা বা বমি বমি ভাব।
  • জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত হলে সব সময় মথা ঘোরে।
  • জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা হয়।
  • জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগীর জ্বর হওয়া।
  • জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগীর কোনো কিছু খাওয়ার সময় গিলতে অসুবিধা হওয়া।
  • জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগীর সব সময় অস্বস্তি অনুভব করে থাকে।
  • জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগীর মুখ থেকে অনবরত অত্যাধিক লালা নির্গত হওয়া।
  • জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত ব্যক্তি সব সময় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা অথবা মানসিক টেনশনে ভুগে।
  • জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত ব্যক্তি সব সময় হ্যালুসিনেশন হওয়া।
  • জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুম না হওয়া।
  • জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে যায়।
  • জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম হল শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়া বা শ্বাস কষ্ট হওয়া।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে খাওয়ার প্রতি অনিহা চলে আসবে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর ক্ষতস্থানে চুলকানির সমস্যা তৈরি হবে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলোতে অস্বস্তি অনুভব করবে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে মানুষের মধ্যে থাকলে বিরক্ত অনুভব করবে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে অল্পতেই উত্তেজিত হবে। যার ফলে মারধর বা ভাংচুরের মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে মাংশপেশিতে ব্যথা হয়।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে শরীরে ক্লান্তি এবং অসসাদগ্রস্থ ভাব আসতে পারে।
  • এমনকি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে পাগলামী আচারণ শুরু করবে। এটি জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে আলো বাতাসে ভয় পায়।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে খিঁচুনি হয়ে থাকে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে অন্ধকারে থাকতে বেশি পছন্দ করে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে অনেক সময় রোগী কোমায় চলে যেতে পারে।
  • জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায় এবং সেই সাথে শরীরে ঝিমুনি ভাব চলে আসে।
  • এছাড়াও অনেক সময় বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়।

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার 

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার বা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল টিকা বা ভ্যাক্সিন। এই জলাতঙ্ক রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল টিকা। তবে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের টিকা আবিষ্কার হলেও সবেচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ টিকা হল হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন (HDCV)।
সেই সাথে এই জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে যে কোনো ব্যক্তি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে সে যেন বসে না থেকে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই টিকা গ্রহণ করে। তাহলেও এই জলাতঙ্কের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যমে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও জলাতঙ্ক রগ কেন হয় এবং জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য জেনে গেছেন। সুতরাং আপনাদে যদি কোনো প্রাণী কামোড় বা আচড় দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সেই সাথে আপনার বাড়িতে যদি কোনো পোষা প্রাণী বা গৃহপালিত প্রাণী থেকে থাকে তাহলে সেই প্রাণী গুলোকে একজন বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নিন। এতে করে সুস্থ্য ও সুন্দর থাকবেন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। আমাদের আকজের আর্টিকেলের কোনো তথ্য যদি আপনার নিটক ভুল প্রমাণিত হয়ে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

সেই সাথে আজকের আর্টিকেলটি আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং সেই সাথে সকল ধরনের তথ্যপেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url