সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ এবং সেই সাথে সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি সন্তান সম্ভব্য অথবা সিজারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আরও আলোচনা করা হয়েছে সিজার সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ভূমিকা

আজকাল সময়ের কাল বির্বতনে এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, সিজারের মাধ্যমে ছাড়া বাচ্চা হওয়া অনেকটাই অসম্ভব হয়ে গেছে। কেননা বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে যত গুলো বাচ্চা জন্ম হয় তাদের বেশির ভাগ গুলোই সিজারের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

আর এই সিজার করানোটাও একজন মায়ের পক্ষে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সাথে সিজারের পরেও বেশ কিছু সময়ের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। কেননা সিজার অনেকেই মনে করে থাকেন যে এটি হয়তো খুবই সাধারন একটি ব্যাপার কিন্তু এটি মোটেও কোনো সাধারন ব্যাপার নয়।

তাই আপনি অথবা আপনার পরিবারের কেউ যদি সিজারের মাধ্যমে একজন সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে চলেন সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। তাই অবশ্যই সিজার করার পরে একজন মায়ের প্রতি সবার যত্নশীল হওয়া উচিৎ।
সিজারের পরে যেসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইনফেকশনের ঝুঁকি। এই লক্ষ্যে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সহ সিজার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য।

সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়

বর্তমানে আমাদের দেশে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রবনতা বেড়েই চলেছে এবং সেই সাথে সিজারের পরে ইনফেকশনের মতো স্বাস্থ্য ঝুকিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশ কিছু কারনে। সিজারের পরে ইনফেকশন হওয়ার কারণ গুলো হল-

  • সিজারের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সমস্যা থাকলেও অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • এছাড়াও হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্যেও এই ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • সিজারের পরে মা রোগীর সাথে সবার অবাধ দেখাশোনা করা এবং রোগীর বিছানায় যেকেউ বসা ইত্যাদি কারনেও ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • সিজারের পরে রোগী যদি অতিরিক্ত নড়াচড়া করে।
  • সিজারিয়ান মায়ের পুষ্টিজনতি সমস্যা থাকলে।
  • এছাড়াও রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে।
  • মিষ্টি জাতীয় কোনো খাবার খেলে।
  • রোগীর চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে।
  • সিজারের স্থানে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পানি বা ডিটারজেন্ট স্পর্স হলে বা লাগালে।
  • এছাড়াও নবজাতকের মল মূত্র সিজারের কাটা জাইগায় লাগলেও ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • মূলত এসব কারণেই ইনফেকশন হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কারনে ইনফেকশন হতে পারে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়এ সম্পর্কে।

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ 

সিজারের পরে ইনফেজশন হলে এটি একজন মা বা রোগীর জন্য খুবই কষ্টকর। সুতরাং সিজারের পরে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ হল-

  • সিজারের পরে যদি কোনো কারনে আপনার সিজারের জাইগার আশেপাশে ফুলে যাওয়া কিংবা লালচে রঙের হয়ে যাওয়াই হল সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ।
  • সিজারের জাইগাতে যদি ইনফেকশন হয় তাহলে সেই স্থানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হবে এবং সেই সাথে পুরো পেট এবং শরীর ফুলে যেতে পারে।
  • সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অনতম একটি হল- সিজারের স্থানে পুজ বা লাল রঙের রক্তের মতো বের হওয়া।
  • সিজারের স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া।
  • সিজারের পরে ইনফেকশন হওয়ার আরও একটি লক্ষণ হল প্রস্রাবের সময় প্রচুর পরিমান কষ্ট হওয়া।
  • সিজারের পরে ইনফেকশনের জন্য অনেক সময় প্রচন্ড জ্বর হওয়া।
  • মূলত এসবই সিজারের পরে ইনফেকশনের লক্ষণ সমূহ। সুতরাং এসব লক্ষণ যদি আপনি লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তাহলে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবেন।

সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয় 

সিজারের পরে বা একজন মা তার নবজাতক সন্তান প্রসবের পরে যে ব্লিডিং হয়, এটাকে সাধারনত lochia বলে। এটা একধরনের স্রাব, যা অনেকটা পিরিওডের মতো মনে হয়। বাচ্চা হওয়া পরে এই ব্লিডিং ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই অবস্থার আবার দুটি ভাগ রয়েছে সেগুলো হল-
প্রথমত বাচ্চা হওয়ার পর থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ব্লিডিং শুরু হতে পারে এবং দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে এই ব্লিডিং শুরু হয়। আর এই ব্লিডিং প্রায় ৪০ দিন অথবা ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। 

সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায় 

সিজার মোটেও কোনো ছোট খাটো অপারেশন নয়। সুতরাং অবশ্যই এই সিজারের পরে যথেষ্ঠ সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় যে কোনো ধরনের দূর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায় এই সম্পর্কে।

আপনার যদি সিজারের মতো বড় অফারেশন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ৩ মাস কোনো ধরনের লং জার্নি করা যাবেনা। এতে করে আপনি সুস্থ্য থাকবেন, এছাড়া আপনি যদি এই সময়ের মধ্যে যদি লং জার্নি করতে চান তাহলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। সুতরাং অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায় 

একজন সিজারিয়ান মায়ের মোটামুটি সুস্থ্য হতে প্রায় ৩ মাসের মতো সময় লাগে। সুতরাং আপনি যদি একজন সিজারের রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই এই তিন মাস খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এই সময় তেমন কোনো কাজ না করায় উচিৎ এবং এই সময়ের মধ্যে শারীরিক মিলন থেকেও বিরত থাকতে হবে। এতে করে আপনি সুস্থ্য থাকবেন।
তবে আপনি যদি কোনো ভারি কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই ৬ মাস পর থেকে করতে হবে এতে করে আপনি সুস্থ্য থাকবেন। আর এর মধ্যে যদি কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমূখীন হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তাহলে বুঝতে পারছেন যে, সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায় এ সম্পর্কে সকল তথ্য।

সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম 

সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম হল - আপনি যদি একজন সিজারের রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই দিনে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে বেল্ট ব্যবহার করতে হবে অন্তত ৪০ দিন পর্যন্ত। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মূখীন হতে পারেন।
এছাড়াও হাঁটার সময়, হাঁচি- কাঁশির সময় এবং টয়লেট ব্যবহারের সময় অবশ্যই আপনাকে বেল্ট ব্যবহার করতে হবে। সুতরাং আপনি যদি একজন সিজারের রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিয়মিত বেল্ট ব্যবহার করুন।

সিজারের কত দিন পর থেকে বেল্ট পরতে হয়

সিজার হওয়ার পরের দিন থেকে প্রায় তিন মাস পর্যন্ত সাধারনত বেল্ট পরতে হয়, এর মাঝে যদি কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, সিজারের কত দিন পর থেকে বেল্ট পরতে হয়।

সিজারের পর কত দিন ব্যাথা থাকে

সিজারের পরে সঠিক ভাবে যত্ন নিলে সাধারনত ১-৩ মাসের মধ্যে ব্যথা সেরে যায়। তবে এর মাঝে যদি কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, সিজারের পর কত দিন ব্যাথা থাকে।

সিজারের ক্ষত শুকাতে কত দিন লাগে

সিজারের পরে সঠিক নিয়ম কানুন ও সঠিক ভাবে ঔষধ সেবন করলে আএই সাথে সঠিক যত্ন নিলে সিজারের ক্ষত ১৫- ৩০ দিনের মধ্যে শুকিয়ে যায়। তবে এর মাঝে যদি কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, সিজারের ক্ষত শুকাতে কত দিন লাগে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সহ সিজার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জেনে গেছেন। সুতরাং আপনি যদি সন্তান সম্ভব্য অথবা সিজারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত উপরের নিয়ম গুলো মেনে চলুন। এতে করে সুস্থ্য ও সুন্দর থাকবেন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। আমাদের আকজের আর্টিকেলের কোনো তথ্য যদি আপনার নিটক ভুল প্রমাণিত হয়ে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

সেই সাথে আজকের আর্টিকেলটি আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং সেই সাথে সকল ধরনের তথ্যপেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url