ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

প্রিয় পাঠক, ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আরও আলোচনা করা হয়েছে ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদন সম্পর্কে, এই ফলের পাশ্ব-পতিক্রিয়া সহ বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ভূমিকা

রূপ কথার গল্পে বা সিনেমা বা নাটকে আমরা ড্রাগনের অনেক কল্পকাহিনী দেখেছি বা শুনেছি। এটি কিন্তু কোনো রূপ কথা বা গল্প কাহিনীর কোনো ড্রাগন নয় এটি একটি ফল। যা অত্যান্ত পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। একই সাথে এটি অনেক সুস্বাদু ও লোভনীয় একটি ফল। যার ফলে ড্রাগন ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ড্রাগন ফলের আরেক নাম হল পিটায়া। এর ফল অনেক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হলেও এর বেশ কিছু রয়েছে অপকারিতা। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ ড্রাগন ফল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। সুতরাং আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ 

ক্রমিক নাম্বার

পুষ্টি উপাদান

পরিমান

০১

ভিটামিন সি

২১ মিলিগ্রাম

০২

ভিটামিন বি৬

১.১ মিলিগ্রাম

০৩

আয়রন

০.৪ মিলিগ্রাম

০৪

কোলিন

১০ মিলিগ্রাম

০৫

কার্বোহাইড্রেট

২৯ গ্রাম

০৬

ক্যালসিয়াম

১৭ মিলিগ্রাম

০৭

ম্যাগনেসিয়াম

১৯ মিলিগ্রাম

০৮

পটাসিয়াম

২৩৫ মিলিগ্রাম

০৯

প্রোটিন

৩ গ্রাম

১০

ফসফরাস

৩১ মিলিগ্রাম

১১

ফাইবার

৭ গ্রাম

১২

ফ্যাট

০ গ্রাম

১৩

ফোলেট

৬ মাইক্রোগ্রাম

১৪

থায়ামিন

০.১ মিলিগ্রাম

১৫

নিয়াসিন

০.৩ মিলিগ্রাম 

১৬

রিবোফ্লাভিন

০.১ মিলিগ্রাম

এগুলোই ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা 

ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে ইতিমধ্যে সকল তথ্য জেনে গেছেন। এখন ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত বিভিন্ন তথ্য গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: নিয়মিত ড্রাগন ফলে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। কেননা ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় বহু গুণে। এই জন্য সহজে কোনো রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারেনা।
এমনকি বিভিন্ন রোগ দ্রুত ভালো হয় এই ফলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের জন্য। সুতরাং আপনি যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন।

চোখ ভালো রাখে: ড্রাগন ফল চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। এর জন্য আপনাকে বেগুনি ড্রাগন ফল খেতে হবে। কেননা বেগুনি ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমান বিটা ক্যারোটিন থাকে যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে ড্রাগন ফল খেতে পারেন।

কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখে: আপনি কোলেস্টরলের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এতে করে আপনার কোলেস্টরলের মাত্রা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: ড্রাগন ফল শুধু মাত্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেই রাখেনা একই সাথে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকিও বহুগুণ কমিয়ে দেয়। কেননা ড্রাগন ফল একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। যার ফলে রক্তের শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে বা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বহু গুণ কমে যায়।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ড্রাগন ফল হাড়কে মুজবুত করে একই সাথে হাড়ের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। কেননা ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমান ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। যার ফলে আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। এই ফল নিয়মিত খেলে জয়েন্টের ব্যথা, ফ্র্যাকচার কিংবা ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়।

বদ হজম দূর করে: আপনি যদি বদ হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। কেননা ড্রাগন ফল ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। আর ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে আমাদের বদ হজম দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।

ক্যান্সারের ঝুকি কমায়: নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। কেননা এতে রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট। যার ফলে এটি কোলন ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি ক্যান্সারের হওয়ার ঝুকি কমাতে চান, তাহলে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ড্রাগন ফল আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের হার্টকে ভালো রাখে। যার ফলে হার্টের সমস্যা হওয়া থেকে বিরত, ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

কিডনি ভালো রাখে: ড্রাগন ফল কিডনি ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং কিডনি ভালো রাখতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।

ওজন কমাতে সহায়তা করে: আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এতে করে আপনার অতিরিক্ত ওজন দ্রত কমে যাবে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ড্রাগন ফল ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য এটি ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলে। যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল, মসৃণ, সতেজ থাকে। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করে থাকে এই ফল।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: আপনি যদি চুল পড়ার সমস্যা বা চুলের অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এতে করে আপনার চুলের সকল ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। সেই সাথে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকিবে।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা 

গর্ববতী মায়েদের জন্য এই ড্রাগন ফল খুবই উপকারি। কেননা এই ফলে প্রয়োজনী ভিটামিন, প্রোটিন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যার ফলে গর্ভাবস্থায় এই ড্রাগন ফল একটি আর্দশ খাবার হতে পারে। সেই সাথে এই ম্যাগনেশিয়ান যুক্ত ফল খেলে মহিলাদের পোস্টমেনোপজাল জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটিই গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

  • ড্রাগন খাওয়ার জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। তবে ড্রাগন ফল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে ধূয়ে নিবেন।
  • এর পূর্বে দেখতে হবে ফলটি খাওয়ার অপযোগী হয়েছে কিনা।
  • তারপরে ভালো করে কেটে ফলের চাপড়া বা চোচা আলাদা করে তারপরে খান। এটিই ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম।

ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক 

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয় সম্পর্কিত আর্টিকেলে ইতিমধ্যে উপকারিতা গুলো জেনেছেন এখন ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
  • অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব হতে পারে, এমনকি বমিও হতে পারে।
  • অ্যালার্জি ও চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ডায়রিয়া ও পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ত্বক ঝালা পোড়া করতে পারে।
  • এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।এগুলোই মূলত ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ।

ড্রাগন ফল খেলে কি মোটা হয়

ড্রাগন ফল খেলে কি মোটা হয় এ সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন, মূলত ড্রাগন ফল খেলে ওজন কমে যায়।

ড্রাগন ফল খেলে কি রক্ত বাড়ে

ড্রাগন ফল খেলে কি রক্ত বাড়ে এ সম্পর্কেও অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন, হ্যাঁ অবশ্যই ড্রাগন ফল খেলে রক্ত বাড়ে।

ড্রাগন ফলে কি কি ভিটামিন আছে

ড্রাগন ফলে কি কি ভিটামিন আছে এ সম্পর্কেও অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন, ড্রাগন ফলে মূলত ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ বিদ্যমান রয়েছে।

ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন কমে

ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন কমে এ সম্পর্কেও অনেকে জানতে চান, হ্যাঁ ড্রাগন ফলে খেলে ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করে থাকে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।। এছাড়াও ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান সহ ড্রাগন ফল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সুতরাং সুস্থ্য থাকতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলের কোনো তথ্য ভুল বলে প্রমাণিত হলে অনুগ্রহ করে আমাদের সাথে সঠিক তথ্য প্রমান সহ যোগাযোগ করবেন।

এরকম নিত্যনতুন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আজকের আর্টিকেলটি সময় দিয়ে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url